এমপি হারুন ও পাপুলের আসন কেন শূন্য ঘোষণা হবে না : জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট

harun_papul.jpg

কাজী শহিদ ইসলাম পাপুল ও হারুন অর রশীদ। ফাইল ছবি

নিজস্ব প্রতিবেদক :

শুল্ক ফাঁকির অভিযোগের মামলায় পাঁচ বছরের কারাদণ্ডপ্রাপ্ত চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনের বিএনপির সংসদ সদস্য (এমপি) হারুন অর রশীদের এমপি পদ কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না এবং তার আসন কেন শূন্য ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। এ ছাড়া সার্টিফিকেট জালিয়াতি ও নির্বাচনী হলফনামায় মিথ্যা তথ্য দেওয়ায় লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সরকারদলীয় সংসদ সদস্য কাজী শহীদ ইসলাম পাপুলকে এমপি পদ থেকে বহিস্কার করে তার নির্বাচনী আসন কেন শূন্য ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। বর্তমানে মানবপাচারের অভিযোগে কুয়েতে আটক রয়েছেন এই এমপি।

জনস্বার্থে করা পৃথক রিটের শুনানি নিয়ে আজ মঙ্গলবার বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি এ কে এম জহিরুল হকের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এই রুল জারি করেন।

আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে জাতীয় সংসদের স্পিকার, নির্বাচন কমিশন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার, মন্ত্রিপরিষদ সচিব, দুদক, আইন সচিব, সাংসদ সদস্য কাজী শহীদ ইসলাম পাপুল, সংসদ সদস্য হারুন অর রশীদ, নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সচিব, সংসদ সচিবালয়ের সচিব, চাঁপাইনবাবগঞ্জের জেলা প্রশাসক ও লক্ষীপুরের জেলা প্রশাসককে এ রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

জানা গেছে, গত বছরের ২১ অক্টোবর শুল্ক ফাঁকির মামলায় এমপি হারুনকে ৫ বছরের কারাদণ্ড দেন বিচারিক আদালত। ২০০৭ সালের ৭ মার্চ এমপি হারুনসহ তিনজনের নামে শুল্ক ফাঁকির মামলাটি দায়ের করে তেজগাঁও থানা পুলিশ। অভিযোগ ছিল, হারুন বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোট সরকারের সময় এমপি থাকাকালে ২০০৫ সালে ব্রিটেন থেকে একটি হ্যামার ব্র্যান্ডের গাড়ি শুল্কমুক্ত সুবিধায় কেনেন। এরপর তিনি গাড়িটি বিক্রি করে দেন এবং এর মাধ্যমে তিনি শুল্ক ফাঁকি দেন।

পাঁচ বছর কারাদণ্ডপ্রাপ্ত হয়েও হারুন এমপি পদে থাকায় আদালতে এই রিট দায়ের করেন ওই আসনের বাসিন্দা আব্দুল ওয়াদুদ। আদালতে রিট আবেদনের পে শুনানি করেন আইনজীবী দেওয়ান ড. মো. আবু ওবায়েদ হোসেন (সেতু)। শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল জেসমিন সুলতানা সামশাদ ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল সামীউল আলম সরকার।

আইনজীবী ড. দেওয়ান মো. আবু ওবায়েদ হোসেন বলেন, ‘উনার পাঁচ বছরের সাজা হয়েছিল। সংবিধানের ৬৬(২)(খ) অনুচ্ছেদে বলা আছে, কোনো সংসদ সদস্য এ পদের অযোগ্য হবেন যদি ফৌজদারি মামলায় তিনি অন্যূন দুই বছর দণ্ডিত হন। সেখানে হারুন অর রশীদ পাঁচ বছরের দণ্ডপ্রাপ্ত। সে কারণে জনস্বার্থে রিট করি।’

তিনি বলেন, ‘মামলার রায় ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে বিচারিক আদালতের অনুলিপি সংসদ সচিবালয়ের সচিব বরাবরে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পাঠিয়েছিলেন। উনারা এই মর্মে কোনো ব্যবস্থা না করায় আমরা লিগ্যাল নোটিশ দিয়েছিলাম। সেটাতে কোনো সাড়া না পেয়ে ১৩ আগস্ট রিট দায়ের করি। রিটের পরিপ্রেক্ষিতে কেন হারুন অর রশীদের এ সিটকে ভ্যাকেট (শূন্য) ঘোষণা করা হবে না মর্মে রুল জারি করেছেন আদালত। একইসঙ্গে সংসদ সদস্য হিসেবে তার কার্যক্রম কেন অবৈধ হবে না মর্মেও রুল জারি করা হয়েছে।’

এমপি হারুন ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের সংসদ নির্বাচনে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসন থেকে ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচিত হন।

এদিকে নির্বাচনী হলফনামায় মিথ্যা তথ্য প্রদান ও সার্টিফিকেট জালিয়াতির অভিযোগে এমপি পাপুলের সংসদ সদস্য পদ চ্যালেঞ্জ করে গত রোববার হাইকোর্টে রিটটি দায়ের করেন ওই আসনে একাদশ সংসদ নির্বাচনের একজন স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য প্রার্থী আবুল ফয়েজ ভূঁইয়া। আদালতে রিট আবেদনের পে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী শেখ আওসাফুর রহমান ও মো.সালাহ উদ্দিন।

আইনজীবী সালাহ উদ্দিন বলেন, ‘শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে নির্বাচনী হলফনামায় তিনি (পাপুল) মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন। তিনি হলফনামায় স্নাতকোত্তর উল্লেখ করে জমা দিয়েছেন স্নাতক সনদ। এ মিথ্যা গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ১৯৭২ এর ১২(সি) এর লংঘন। তাই আবুল ফয়েজ ভূঁইয়া রিট করেছেন। আদালত শুনানি নিয়ে রুল জারি করেছেন। রিট আবেদনে জাল সনদ সংক্রান্ত একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদন সংযুক্ত করা হয়।’

ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘সংশ্নিষ্ট সূত্র জানায়, পাপুল প্রতারণা, জালিয়াতি করে শুধু অবৈধ সম্পদই অর্জন করেননি। তিনি জালিয়াতি করে ভুয়া শিক্ষাগত সনদও জোগাড় করেছেন। তিনি সিয়েরা লিয়নের মিলটন মরগাই কলেজ অব এডুকেশন অ্যান্ড টেকনোলজি থেকে ব্যাচেলর অব সোশ্যাল সায়েন্স ইন ইকোনমিক্স বিষয়ে স্নাতক সনদ সংগ্রহ করেছেন। শিক্ষাবর্ষ ১৯৮৭। ওই শিাপ্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটে দেখা গেছে, পাপুল যে বিষয়ের ওপর স্নাতক সনদ জোগাড় করেছেন কলেজটিতে ওই বিষয়ের ওপর কোনো ডিপার্টমেন্ট নেই।’

প্রতিবেদনটিতে আরও বলা হয়, ‘খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পাপুল ২০১৬ সালে কুয়েত থেকে নিজ এলাকা লক্ষ্মীপুর ফিরে ‘লক্ষ্মীপুর২৪ডটকমে’ একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। এটি প্রকাশ করা হয় একই বছরের ১১ সেপ্টেম্বর। সেখানে তিনি বলেছেন, ঢাকার তিতুমীর কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেছেন ১৯৯২ সালে। সিয়েরা লিয়নের মিলটন মরগাই কলেজের নামে স্নাতক সনদ সংগ্রহ করেছেন ১৯৮৭ সালে। ১৯৯২ সালে উচ্চ মাধ্যমিক ও এর আগে ১৯৮৭ সালে স্নাতক পাসের তথ্যের এই অসামঞ্জস্যপূর্ণ হিসাব তাকে বিতর্কিত করেছে। নিউইয়র্ক সিটি কলেজে অর্থনীতিতে পড়াশোনা করেছেন বলে ওই সাক্ষাতকারে উল্লেখ করেছেন।’

চলতি বছরের ৬ জুন স্থানীয় সময় রাত সাড়ে ৯টায় কুয়েতের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) সদস্যরা মুশরেফ আবাসিক এলাকা থেকে লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য শহীদ ইসলাম পাপুলকে গ্রেপ্তার করেন। কুয়েত সিআইডি তার বিরুদ্ধে কুয়েতে মানবপাচার ও অর্থপাচারের অভিযোগ এনেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top