প্রতারণা ও অর্থ হাতিয়ে নেয়ার কথা স্বীকার করেছে সাহেদ: ডিবি

sa.jpg

ছবি: সংগৃহীত

নিজস্ব প্রতিবেদক :

সাহেদকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দশ দিনের রিমান্ডে পাওয়ার পর বাতেন বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে প্রতারণার কথা স্বীকার করেছে। এছাড়া রিজেন্ট হাসপাতালের বেশ কিছু মেশিনপত্র র‌্যাবের অভিযানের আগেই সরিয়ে ফেলার কথাও বলেছেন। করোনা পরীক্ষার ভুয়া রিপোর্ট দিয়ে প্রতারণা ও রোগীদের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার কথা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাহেদ।

বৃহস্পতিবার দুপুরে গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে এমন তথ্য জানিয়েছেন গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার আব্দুল বাতেন।

সেসব মেশিন দিয়ে কী করা হত, সেগুলো এখন কোথায় রাখা হয়েছে, সে বিষয়েও সাহেদকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে জানিয়েছেন তিনি। এই গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, তাকে রিমান্ড আনা হয়েছে, দেখা যাক জিজ্ঞাসাবাদে কী কী বলেন। এদিকে করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষা নিয়ে ভুয়া রিপোর্ট দেয়ার মামলায় সাহেদকে জিজ্ঞাসাবাদে ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।

বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালত শুনানি নিয়ে এই আদেশ দেন। একই মামলায় রিজেন্ট হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসুদ পারভেজকে ১০ দিন ও কর্মী তরিকুল ইসলামের সাত দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।

সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) কার্যালয় থেকে সাহেদকে আদালতে নেয়া হয়। এ জন্য আগে থেকেই আদালত এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। সাহেদকে আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করে ডিবি। শুনানি নিয়ে আদালত ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

এর আগে বোরকা পরে সাতক্ষীরা সীমান্ত পার হওয়ার সময় বুধবার সকালে র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার হন ধুরন্ধর এ প্রতারক। রিজেন্ট হাসপাতালে র‌্যাবের অভিযান হতে পারে এমনটি আঁচ করতে পেরে ঢাকা ছেড়ে নরসিংদী হয়ে কক্সবাজারের মহেশখালী যান সাহেদ।

এরপর অভিযান বন্ধে ও নিজেকে বাঁচাতে এক সময়ের পরিচিতজনদের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেন তিনি। এসব জায়গা থেকে প্রত্যাশিত সাড়া না পেয়ে দেশ ত্যাগের সব চেষ্টাই ছিল তার। কখনও ব্যক্তিগত পরিবহনে, কখনও হেঁটে, কখনও আবার ট্রাকে দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ছুটে বেড়ান তিনি। র‌্যাব, পুলিশ, বিজিবিসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কড়া নজরদারির মধ্যেও ৮ দিন পর গ্রেফতার হন বহুল আলোচিত এ প্রতারক।

বুধবার র‌্যাব মহাপরিচালক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন এক সংবাদ সম্মেলনে সাহেদের গ্রেফতারসংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন।

পাশাপাশি তদন্তসংশ্লিষ্ট আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপ করেও জানা গেছে শাহেদসংক্রান্ত নানা তথ্য।

র‌্যাব সদর দফতরে অনুষ্ঠিত এ সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বুধবার ভোর ৫টার দিকে সাতক্ষীরার দেবহাটা সীমান্তবর্তী কোমরপুর গ্রামের লবঙ্গবতী নদী পার হওয়ার জন্য বোরকা পরে মাছ ধরা নৌকায় উঠেছিলেন সাহেদ। সেখান থেকেই তাকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। উদ্ধার করা হয় তিন রাউন্ড গুলিসহ একটি বিদেশি অবৈধ অস্ত্র। এ সময় নদীতে সাঁতরে পালিয়ে যান ট্রলার চালক। সকাল ৯টায় সাতক্ষীরা থেকে হেলিকপ্টারে তাকে ঢাকায় নিয়ে আসা হয়। প্রথমে নেয়া হয় র‌্যাব সদর দফতরে। এ সময় অসংখ্য ভুক্তভোগী সেখানে সাহেদের বিচারের দাবিতে জড়ো হন।

সাহেদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে তাকে নিয়ে বেলা ১১টার দিকে উত্তরার ১১ নম্বর সেক্টরের ২০ নম্বর সড়কের ৬২ নম্বর বাসার পঞ্চম তলায় ‘গোপন অফিসে’ অভিযান চালায় র‌্যাব। এখান থেকে জব্দ করা হয় ১ লাখ ৪৬ হাজার জাল টাকা।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে বিকাল সোয়া ৪টার দিকে কিছুক্ষণের জন্য সদর দফতর থেকে তাকে নেয়া হয় উত্তরার র‌্যাব-১ এর অফিসে। সেখান থেকে বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে তদন্তকারী কর্মকর্তার কাছে হস্তান্তরের জন্য তাকে ডিবি কার্যালয়ের উদ্দেশে নেয়া হয়। বিকাল সোয়া ৫টায় স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য সাহেদকে নেয়া হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।

পরীক্ষা ছাড়াই করোনাভাইরাস পরীক্ষার ভুয়া ফলাফল প্রদানসহ নানা অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ৬ ও ৭ জুলাই রিজেন্ট হাসপাতালের উত্তরা ও মিরপুর শাখায় র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালান।

অভিযানে করোনা পরীক্ষার হাজার হাজার ভুয়া রিপোর্ট দিয়ে রোগীদের কাছ থেকে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার প্রমাণ মেলে। এরপর একের পর এক উঠে আসতে থাকে সাহেদের অভিনব প্রতারণার সব তথ্য।

৭ জুলাই রাতে উত্তরা পশ্চিম থানায় প্রতারণার অভিযোগে হাসপাতালের চেয়ারম্যান মো. সাহেদকে এক নম্বর আসামি করে ১৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। মঙ্গলবার পর্যন্ত রিজেন্ট গ্রুপের এমডি ও মামলার ২নং আসামি মাসুদ পারভেজসহ ১০ জনকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। আর বুধবার গ্রেফতার হলেন রিজেন্ট হাসপাতালের মালিক সাহেদও।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top