ভাস্কর্য বিরোধিরা ধর্ম ব্যবসায়ী, ধর্মের অপব্যাখ্যাকারী : ইনু

14915226_210596679372284_6985576583615424036_n.jpg

নিজস্ব প্রতিবেদক :: 

ভাস্কর্য বিরোধীরা বাংলাদেশ বিরোধী ও এদের ধর্মীয় জ্ঞান সীমিত বলে মন্তব্য করেছেন মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, ১৪ দলীয় জোটের অন্যতম নেতা ও জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু। ২৯ নভেম্বর রবিবার গণমধ্যমের সাথে একান্ত সাক্ষাতকারে সাবেক তথ্য মন্ত্রী হাসানুল হক ইনু এসব কথা বলেছেন, ভাস্কর্য বিতর্ক, মুক্তিযুদ্ধ ও স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে ইসলামিক দলগুলোর অবস্থান ও ভাস্কর্য ইস্যুতে বিএনপি-জামায়াতের ইন্ধন নিয়ে।

ভাস্কর্য নির্মাণের বিরোধিতা কেবল হেফাজত নয় সকল ধর্মব্যবসায়ী ইসলামিক দলগুলোর বলে দাবি করে ইনু বলেন, ‘কেবল হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ নয় চরমোনাই হুজুরদের ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশসহ প্রায় সকল মৌলবাদী সংগঠন ও রাজনৈতিক দলই ভাস্কর্যের বিরোধিতা করেছে।

তিনি বলেন, মৌলবাদী মাত্রই ইতিহাস-ঐতিহ্য, মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী। এরা চিহ্নিত ধর্ম ব্যবসায়ী। এর ধর্ম অপব্যাখ্যাকারী। এরা ধর্মকে বিক্রি করে রাজনীতি করে, রাজনৈতিক ফায়দা হাসিল করে।”

সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, ‘বাস্তবে কিন্তু এরা ধর্মের কোন জ্ঞানই রাখে না। এরা আলেম না। এদের ধর্ম জ্ঞান নেই। আছে কেবল ধর্মকে ব্যবহার করে ব্যবসা করার ধান্ধা। ‘চিহ্নিত এসব ধর্ম ব্যবসায়ীরা এবারই প্রথম বাংলাদেশ ও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের বিরোধিতা করছে তা কিন্তু নয়। অতীতেও এরা বাংলাদেশের বিরোধিতা করেছে। এদের অতীত ইতিহাস বা বর্তমানের অবস্থান সবই বাংলাদেশ বিরোধী,’ ইনু বলেন।

মৌলবাদী সংগঠনগুলো সবসময়ই বাংলাদেশের বিরোধি ছিল বলে দাবি করে তিনি বলেন, ‘এই মৌলবাদীরাই ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের বিরোধিতা করে পাকিস্তানকে সহযোগিতা করেছে। এরা বাংলাদেশের ইতিহাস-সংস্কৃতির বিরোধিতা করেছে। এমনকি বাংলাদেশের ছাত্রসমাজ-রাজনৈতিক দলগুলো যখন সামরিক স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন করেছে, তখন এই মৌলবাদী সংগঠন ও দলগুলোই সামরিক সরকারের দোসর হিসাবে কাজ করেছে। এরা যেমন পাকিস্তানের দালালী করেছে তেমনি সামরিক সরকারেরও দালালি করেছে।’

সরকারকে উৎখাতে এরা সচেষ্ট দাবি করে ইনু বলেন, ‘২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ও জোটের শরিকরা ক্ষমতায় আসার পর বিএনপি ও জামায়াতের সরাসরি ইন্ধনে এই তেঁতুল হুজুররা আহম্মদ শফীর নেতৃত্বে জ্বালাও পোড়াও ও সহিংসতার মধ্যে দিয়ে সরকারকে উৎখাত করার চেষ্টা করেছে।’

তিনি বলেন, ‘মৌলবাদী এই সব দল ও সংগঠনের কাজই হলো রাজনীতি ও দেশের স্বাভাবিক পরিস্থিতি বিনষ্ট করে দেশকে অস্থির করে তোলা। বর্তমানের ভাস্কর্য নিয়ে এই পাগলের প্রলাপও দেশের স্বাভাবিক পরিস্থিতি ও রাজনৈতিক পরিবেশকে অশান্ত করে তোলার চেষ্টা মাত্র। এরা রাজনীতিকে অস্বাভাবিক করার মাধ্যমে দেশে অরাজকতা তৈরির চেষ্টা করছে। ভাস্কর্য ইস্যুটাও দেশে অরাজকতা ও দাঙ্গা সৃষ্টির পায়তারা করছে।’

এদেরকে কঠোরভাবে দমন করা প্রয়োজন দাবি করে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রগতিশীল ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অংশকে এদের বিরুদ্ধে কঠোর হতে হবে। এই সকল ধর্ম ব্যবসায়ীদের কোনভাবেই হালকাভাবে নেওয়া উচিত নয়। এদের প্রতি নমনীয়তা দেখিয়ে কোন প্রকার সমঝোতা করার চেষ্টাও উচিত নয়।’

তিনি বলেন, ‘ধর্ম ব্যবসায়ীরা মূলত সব কিছুকে নিজেদের প্রয়োজনে কাজে লাগায়। এরা গণতন্ত্রকে ব্যবহার করে গণতন্ত্র ধ্বংসের চেষ্টা করে। এখন এরা ভাস্কর্য ইস্যুকে ব্যবহার করে মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে ধ্বংস করার চেষ্টা করছে। ধর্ম ব্যবসয়াী জামায়াত ও যুদ্ধাপরাধকে ঠিক যেভাবে বাংলাদেশে প্রতিহত ও প্রতিরোধ করা হয়েছিল ঠিক একই কায়দায় এই সকল মৌলবাদীদের প্রতিরোধে দেশের সকল স্তরের প্রগতিশীল, গণতন্ত্রমনা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘তেঁতুল হুজুররা কেবল ভাস্কর্য বিরোধিতা করেছে তা নয়। এরা নারীর বিরুদ্ধেও অবস্থান নিয়েছে। নারীদের বিষয়ে এদের অবস্থান চক্রান্তমূলক। বাংলাদেশের নারীদের বিরুদ্ধে হেফাজতে ইসলামের অবস্থান বাংলাদেশের অর্থনীতির চাকাকে স্থমিত করে পুরো অর্থনীতিকে ধ্বংস করার শামিল।’

‘দেশের আপামর জনতা এই ধর্মান্ধ দলগুলোর ধর্ম গেল জিকিরের বিরুদ্ধে সারা দেশের সচেতন মানুষ সোচ্চার হলেও বিএনপি ও জামায়াত একেবারেই নিশ্চুপ। বিএনপি এই নিশ্চুপতার মাধ্যমে আসলে ধর্মান্ধ গোষ্ঠীদের দাবিকেই ইন্ধন দিচ্ছে। হেফাজত ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের এই দাবির পেছনে আদতে বিএনপির ইন্ধন রয়েছে। যদি ইন্ধন না থাকতো তাহলে ভাস্কর্য বিতর্ক নিয়ে বিএনপি অবস্থান প্রতিক্রিয়া জানাতো বিবৃতি দিতো, দাবি ১৪ দলীয় জোটের এই নেতার। সূত্র : বাংলা ইনসাইডার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

scroll to top